প্রিন্ট এর তারিখঃ অক্টোবর ২৪, ২০২৫, ৩:১৩ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ অক্টোবর ১৬, ২০২৫, ৯:৪৭ পি.এম
মনপুরা দ্বীপ

মনপুরা দ্বীপ (Manpura Island) বাংলাদেশের ভৌগোলিক ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অন্যতম এক বিস্ময়। এটি ভোলা জেলার অন্তর্গত একটি দ্বীপ উপজেলা, যা মেঘনা নদীর মোহনায় অবস্থিত এবং বঙ্গোপসাগরের খুব কাছাকাছি। নিচে মনপুরা দ্বীপ সম্পর্কে বিস্তারিত দেওয়া হলো —
🌍 ভৌগোলিক অবস্থান:
- অবস্থান: ভোলা জেলার দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে
- আয়তন: প্রায় ৪৮৫ বর্গকিলোমিটার
- চারদিকে: মেঘনা নদী ও বঙ্গোপসাগর
- প্রতিবেশী অঞ্চল: দক্ষিণে হাতিয়া দ্বীপ (নোয়াখালী), পশ্চিমে ভোলা সদর
🌿 প্রাকৃতিক সৌন্দর্য:
- মনপুরা দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মনোমুগ্ধকর। এখানে নদী, সমুদ্র, সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত, সবুজ বন ও পশুপাখির আবাস মিলে এক অনন্য পরিবেশ তৈরি করেছে।
- দ্বীপের চারপাশে জোয়ার-ভাটা-এর দৃশ্য অত্যন্ত মনোরম।
- রয়েছে সমুদ্রতট, কেওড়া বন, জেলেপল্লি ও পাখির অভয়াশ্রম।
- শীতকালে অসংখ্য অভিবাসী পাখি আসে, যা দ্বীপটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।
🐟 জীবনযাপন ও অর্থনীতি:
- প্রধান পেশা: মাছ ধরা ও কৃষিকাজ
- মানুষ সাধারণত নদী ও সমুদ্রনির্ভর জীবিকা নির্বাহ করে।
- বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ধীরে ধীরে উন্নত হচ্ছে।
🚤 যাতায়াত ব্যবস্থা:
- ঢাকা থেকে মনপুরা পৌঁছানোর সবচেয়ে প্রচলিত পথ হলো —
- ঢাকা → ভোলা (লঞ্চ বা বাসে)
- তারপর ভোলা → মনপুরা (লঞ্চ বা ট্রলারে)
- এছাড়া চট্টগ্রাম বা নোয়াখালী দিক থেকেও নদীপথে যাওয়া যায়।
🎬 সাংস্কৃতিক গুরুত্ব:
মনপুরার নামটি বাংলাদেশে বিশেষভাবে পরিচিত হয় ২০০৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত বিখ্যাত চলচ্চিত্র “মনপুরা”-এর মাধ্যমে, যা গিয়াসউদ্দিন সেলিম পরিচালিত। সিনেমাটি দ্বীপটির রোমান্টিক ও প্রাকৃতিক রূপকে সারা দেশে পরিচিত করে তোলে।
🏝️ দর্শনীয় স্থানসমূহ:
- মনপুরা ল্যান্ডিং স্টেশন
- মনপুরা বাতিঘর
- চরের কেওড়া বন
- সূর্যাস্ত দেখার ঘাট
- পাখির দ্বীপ (শীতকালে অভিবাসী পাখির জন্য বিখ্যাত)
🗺️ মনপুরা দ্বীপ যাওয়ার উপায়:
🚤 ১. মনপুরা পৌঁছানোর প্রধান তিনটি রুট রয়েছে —
🔹 ঢাকা → ভোলা → মনপুরা:
- ঢাকা সদরঘাট থেকে ভোলার জন্য লঞ্চ ছাড়ে (যেমন: MV Karnafuli, Green Line, Upakul ইত্যাদি)।
- ⏱ সময় লাগে প্রায় ৮–৯ ঘণ্টা।
- ভোলা থেকে ইলিশা ঘাট হয়ে ট্রলারে বা ছোট লঞ্চে মনপুরা ল্যান্ডিং স্টেশন পর্যন্ত যাওয়া যায়।
- ⏱ সময় লাগে ২–৩ ঘণ্টা।
🔹 চট্টগ্রাম / নোয়াখালী → হাতিয়া → মনপুরা:
- হাতিয়া দ্বীপ থেকে নৌপথে সরাসরি মনপুরা যাওয়া যায়।
- এই পথে সময় কম লাগে, কিন্তু নৌযান কম পাওয়া যায়।
🏠 ২. থাকার ব্যবস্থা:
- মনপুরায় বিলাসবহুল হোটেল নেই, তবে কয়েকটি সুন্দর গেস্ট হাউস ও রিসোর্ট আছে:
- মনপুরা গেস্ট হাউস (ল্যান্ডিং স্টেশনের কাছে)
- Upazila Rest House (আগে থেকে অনুমতি নিতে হয়)
- স্থানীয় কটেজ বা হোমস্টে — স্থানীয়দের বাড়িতে থাকার সুযোগও পাওয়া যায় (খুবই সুন্দর অভিজ্ঞতা)।
💰 খরচ:
- সাধারণ রুম: প্রতি রাত ৫০০–১০০০ টাকা
- রিসোর্ট মানের: প্রতি রাত ১৫০০–২৫০০ টাকা
🍤 ৩. খাওয়ার ব্যবস্থা:
- মনপুরার খাবারের মূল আকর্ষণ হলো তাজা মাছ ও সামুদ্রিক খাবার 🐟
স্থানীয় রেস্টুরেন্টে পাবেন:
- ইলিশ, রূপচাঁদা, চিংড়ি, কাকড়া
- নারকেল দুধে রান্না করা তরকারি
- টাটকা ডাবের পানি ও স্থানীয় ফল
- 💰 খাবারের খরচ: দিনে গড়ে ৩০০–৫০০ টাকা
🌅 ৪. ঘোরার জায়গা:
- মনপুরা ল্যান্ডিং স্টেশন: সূর্যাস্ত দেখার সবচেয়ে সুন্দর জায়গা 🌇
- মনপুরা বাতিঘর: দ্বীপের অন্যতম আকর্ষণ; ফটো তোলার জন্য অসাধারণ স্থান 📸
- চরের কেওড়া বন: নৌকায় করে ঘোরা যায়, শীতকালে অভিবাসী পাখির অভয়ারণ্য 🐦
- পাখির দ্বীপ (Bird Island): শীত মৌসুমে হাজারো বিদেশি পাখির আগমন।
- জেলেপল্লি ভ্রমণ: স্থানীয় জীবনযাত্রা কাছ থেকে দেখা যায়।
🕶️ ৬. ভ্রমণ টিপস:
- নভেম্বর–ফেব্রুয়ারি হলো ভ্রমণের সেরা সময় ☀️
- মশা ও সূর্যের তাপ থেকে বাঁচতে রিপেলেন্ট ও সানস্ক্রিন রাখো।
- ক্যামেরা, পাওয়ার ব্যাংক, লাইট, পানির বোতল নিতে ভুলো না।
- স্থানীয়দের সাথে ভদ্র আচরণ করো, কারণ এখানকার মানুষ খুব অতিথিপরায়ণ।
Copyright © 2025 ভ্রমন পোস্ট | Vromon Post. All rights reserved.